Tiger M@te: বাংলার হ্যাকার রাজপুত্রের গোপন ইতিহাস
(একটি Bug Mohol স্পেশাল স্টোরি)

ভূমিকা: রহস্যের ছায়ায় এক নাম
ভাবুন, আপনি গুগল খুললেন। হঠাৎ সামনে ভেসে উঠল কালো পর্দা, লেখা—
“Hacked by TiGER-M@TE – Bangladeshi HackeR”
এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। এটি বাস্তব, আর এর পেছনে থাকা নামটি আজও সাইবার দুনিয়ায় কিংবদন্তি—Tiger M@te।
বাংলাদেশি হ্যাকার, যিনি কয়েক বছরের মধ্যে এমন কিছু করেছিলেন, যা আজও গিনেস বুকের পাতায় নেই, কিন্তু হ্যাকার কালচারে অমর হয়ে আছে।
কে এই Tiger M@te? কেমন করে গুগল, ইয়াহু, মাইক্রোসফট, এমনকি সাত লাখ ওয়েবসাইট একসাথে তার হাতে হ্যাক হলো? চলুন ঢুকে পড়ি এক সাইবার গল্পে, যেখানে বাস্তবতার চেয়েও রোমাঞ্চ বেশি।
শুরুর দিন: ২০০৭ সালের এক কিশোর
গল্পটা শুরু হয় ২০০৭ সালে। বাংলাদেশের সাইবার দুনিয়া তখনো নবজাতক। হঠাৎ অনলাইন ফোরামে দেখা দিল একটি নতুন নাম—Tiger M@te।
নিজেকে পরিচয় করালেন মাত্র এক লাইনে:
"Nationality: Bangladeshi. I love hacking servers. Using only private exploits."
এমন আত্মবিশ্বাস! তার প্রথম কাজগুলো ছিল সার্ভার এক্সপ্লয়েট নিয়ে খেলা। তিনি স্ক্রিপ্ট কিডি নন—তিনি কোড বুঝতেন, সিস্টেমের দুর্বলতা বের করতেন। তখন কেউ জানত না, এই নাম একদিন গুগলের মতো জায়ান্টকে নাড়িয়ে দেবে।
গুগল বাংলাদেশ কাণ্ড – ২০১১ সালের ভোরে দেশ কাঁপানো ঘটনা
২০১১ সালের জানুয়ারি। এক সকালে বাংলাদেশি ইউজাররা গুগল খুলে শকড! সার্চ ইঞ্জিনের জায়গায় ডিফেইসড পেজ। তাতে লেখা:
Google Bangladesh OWn3D by TiGER-M@TE
কিন্তু কীভাবে? গুগল তো বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত সিস্টেমের মধ্যে একটি! গল্পের টুইস্ট এখানেই। গুগলের সার্ভার হ্যাক হয়নি। DNS Hijack করা হয়েছিল।
বাংলাদেশি ডোমেইন রেজিস্ট্রির সিকিউরিটি ছিল দুর্বল। Tiger M@te সেই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে গুগলের লোকাল ট্রাফিক রিডিরেক্ট করলেন নিজের সার্ভারে।
এই ঘটনার পর সংবাদ শিরোনাম হলো:
“টাইগার মেটের তাণ্ডবে দিশেহারা ডিজিটাল বাংলাদেশ” (DW বাংলা)
এটাই ছিল শুরু।
সেপ্টেম্বর ২০১১ – বিশ্ব রেকর্ড! InMotion Hosting কাণ্ড
যখন মানুষ ভাবছে, ঘটনা শেষ, তখন Tiger M@te করলেন এমন কিছু, যা আজও হ্যাকিং ইতিহাসের অন্যতম বড় ঘটনা।
InMotion Hosting—আমেরিকার জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি। Tiger M@te পেলেন একটি প্রাইভেট ০-ডে এক্সপ্লয়েট। ফলাফল?
- ৭,০০,০০০ ওয়েবসাইট একসাথে হ্যাকড!
- প্রতিটি পেজে লেখা:
Server Hacked by TiGER-M@TE
Bangladeshi HackeR
The Hacker News হেডলাইন দিল:
“Bangladeshi Hacker creates new world record: 700,000 websites hacked in one shot!”
I used private 0-day exploits. No web shell, no guessing. Full root!
Tiger M@te
২০১৩: আফ্রিকান অভিযানে DNS Hijack
Tiger M@te এবার টার্গেট করলেন আফ্রিকার গুগল ডোমেইন।
✔ Google Kenya (google.co.ke)
✔ Google Malawi
ডোমেইন রেজিস্ট্রির দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে DNS Hijack। গুগল, ইয়াহু, MSN সব রিডিরেক্ট তার ডিফেইস পেজে। প্রযুক্তিগতভাবে এটি ছিল নিখুঁত DNS Registry Attack।
২০১৫: Google Malaysia ও Yahoo Malaysia – Comeback Attack
Tiger M@te আবার খবরের শিরোনাম। গুগল মালয়েশিয়া, ইয়াহু মালয়েশিয়া হ্যাক। ডিফেইস পেজে লেখা:
Google Malaysia hacked by Tiger-M@te #Bangladeshi Hacker
অন্য উল্লেখযোগ্য শিকার
- Airtel Bangladesh
- Warid Telecom
- American Express
- Avast, Microsoft, Kaspersky
- Yahoo Malaysia
DNS Hijack: তার অস্ত্র
DNS হলো ইন্টারনেটের ফোনবুক। যদি কেউ এটি বদলে দেয়, আপনি ভুল ঠিকানায় যাবেন। Tiger M@te এই কৌশলকে শিল্পে পরিণত করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: প্রশংসা না আতঙ্ক?
গুগল দ্রুত রেসপন্স দিয়ে বলল—“আমাদের সার্ভার ঠিক আছে, সমস্যা লোকাল রেজিস্ট্রিতে।”
InMotion Hosting গ্রাহকদের ব্যাকআপ থেকে সাইট রিস্টোর করতে বলল।
The Hacker News তাকে ডাকল World Record Holder।
বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম তাকে বলল “ডিজিটাল তাণ্ডবের জনক”।
প্রশ্ন উঠল: তিনি হিরো নাকি ক্রিমিনাল? গ্রেপ্তারের কোনো খবর নেই। তার পরিচয় আজও রহস্য।
Tiger M@te-এর মাইন্ডসেট: জ্ঞান না ধ্বংস?
"Hack your own code, don’t use others. Hacking is knowledge, not script."
এই লাইন প্রমাণ করে—সে স্ক্রিপ্ট কিডি ছিল না। জ্ঞানের খোঁজেই হ্যাকিং করত। কিন্তু নৈতিক সীমানা অতিক্রম করেছিল কিনা, সেটি বিতর্কিত।
Legacy: কেন আজও আলোচনায়?
Tiger M@te দেখিয়ে দিয়েছে—একটি দেশ থেকে এক হ্যাকারও বিশ্ব কাঁপাতে পারে। তার আক্রমণ সাইবার সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রিকে চোখ খুলতে বাধ্য করেছে। আজও তার InMotion Hosting Mass Defacement হ্যাক নিয়ে সাইবার কনফারেন্সে আলোচনা হয়।
শিক্ষা
১. DNS সিকিউরিটি অবহেলা মারাত্মক।
২. Hosting Company-কে মাল্টি-লেভেল ডিফেন্স রাখতে হবে।
৩. সাইবার দুনিয়ায় কারো প্রতি হেলাফেলা বিপদ ডেকে আনে।
Related Posts
Cyber Legend নাকি Criminal?
একজন কি কেবল অপরাধী যদি তার হ্যাকের পেছনে অর্থলাভ না থাকে? নাকি তিনি এক বিদ্রোহী, যে সিস্টেমকে দুর্বলতা দেখিয়ে শক্তিশালী করল? Tiger M@te-এর গল্পে এই প্রশ্ন চিরকাল থাকবে। কিন্তু একটি জিনিস নিশ্চিত—তার নাম ইতিহাসে লেখা হয়ে গেছে।
Tiger M@te ছিলেন ঝড়। এবং হয়তো চিরকাল রহস্যই থেকে যাবেন।
Tiger M@te সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
Tiger M@te কে?
Tiger M@te একজন বাংলাদেশি হ্যাকার, যিনি Google DNS Hijack এবং InMotion Hosting আক্রমণের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তিনি এক আক্রমণে ৭ লাখ ওয়েবসাইট হ্যাক করে রেকর্ড করেছিলেন।
Tiger M@te কখন হ্যাকিং শুরু করেছিলেন?
তিনি ২০০৭ সালের দিকে হ্যাকিং শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে বড় আক্রমণের জন্য পরিচিত হন।
Tiger M@te-এর সবচেয়ে বড় হ্যাক কোনটি?
২০১১ সালে InMotion Hosting আক্রমণ তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ। এক আক্রমণে তিনি প্রায় ৭ লাখ ওয়েবসাইট ডিফেইস করেছিলেন।
Tiger M@te কি গুগল হ্যাক করেছিলেন?
হ্যাঁ, তিনি Google Bangladesh, Google Kenya, Google Malaysia-এর DNS Hijack করেছিলেন, তবে গুগলের মূল সার্ভার হ্যাক হয়নি।
Tiger M@te কোন কৌশল ব্যবহার করতেন?
তিনি DNS Hijack এবং সার্ভার-লেভেল ০-ডে এক্সপ্লয়েট ব্যবহার করতেন, যা তার সিগনেচার টেকনিক হিসেবে পরিচিত।
Tiger M@te কোন কোন সাইট হ্যাক করেছিলেন?
Google Bangladesh, Yahoo Malaysia, Airtel Bangladesh, American Express, Warid Telecom সহ বিভিন্ন বড় সাইট তার আক্রমণের শিকার হয়েছিল।
Tiger M@te কি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন?
না, তার গ্রেপ্তারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার পরিচয় আজও রহস্যময়।
Tiger M@te এখন কোথায়?
তার বর্তমান অবস্থান বা পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ্যে নেই। অনেকেই মনে করেন তিনি হ্যাকিং দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
Tiger M@te-এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
তার নিজের বক্তব্য অনুযায়ী, হ্যাকিং ছিল তার কাছে জ্ঞান ও এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যম। তবে কিছু আক্রমণ বিতর্কিত ছিল।
Tiger M@te-এর সম্পর্কে আরও কোথায় পড়া যাবে?
Bug Mohol, The Hacker News এবং DW বাংলা-তে Tiger M@te সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।